ঘরে ফেরার সময় হয়েছে, নেইমার

                               ঘরে ফেরার সময় হয়েছে, নেইমার

                                            ঘরে ফেরার সময় হয়েছে, নেইমার

নেইমার দা সিলভা সান্তোস জুনিয়র—ফুটবল বিশ্বের এক অনন্য নাম। ব্রাজিলের এই সুপারস্টার তার অসাধারণ দক্ষতা, চমৎকার ড্রিবলিং এবং গোল করার সামর্থ্যের জন্য পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেইমারের ক্যারিয়ারে অনেক চড়াই-উতরাই দেখা গেছে। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলে সফলতার পরেও, মনে হচ্ছে যেন তার ঘরে ফেরার সময় হয়েছে—ব্রাজিলের ফুটবলে, তার শিকড়ে।

শৈশব ও উত্থান

নেইমারের ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ব্রাজিলের ক্লাব সান্তোসে। ছোটবেলা থেকেই তার প্রতিভার ঝলক দেখা যাচ্ছিল। ২০০৯ সালে সান্তোসের হয়ে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক ঘটে, এবং খুব দ্রুত তিনি ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর নজরে আসেন।

ইউরোপীয় অধ্যায়

২০১৩ সালে বার্সেলোনায় যোগ দিয়ে নেইমার তার ক্যারিয়ারের স্বর্ণযুগ শুরু করেন। মেসি ও সুয়ারেজের সঙ্গে মিলে গড়ে তোলেন ‘এমএসএন’ ত্রয়ী, যা ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম ভয়ংকর আক্রমণভাগ হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়, লা লিগা শিরোপা এবং অন্যান্য সাফল্য এনে দেন দলকে।

কিন্তু নতুন চ্যালেঞ্জের খোঁজে ২০১৭ সালে নেইমার প্যারিস সেন্ট-জার্মেইন (পিএসজি)-তে যোগ দেন, যা বিশ্ব ফুটবলে এক নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করে। ২২২ মিলিয়ন ইউরোর ট্রান্সফার ফি দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হন তিনি। তবে ফ্রান্সে তিনি আশানুরূপ সাফল্য পাননি। চোট-আঘাত, অনিয়মিত পারফরম্যান্স এবং অফ-ফিল্ড বিতর্ক তাকে হতাশ করে তুলেছে।

জাতীয় দলের চ্যালেঞ্জ

নেইমার ব্রাজিলের জাতীয় দলের অন্যতম প্রধান তারকা, তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে তিনি এখনো কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাননি। ২০১৪ বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে সেমিফাইনাল খেলতে পারেননি, আর ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপে দল প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি। ২০২৪ কোপা আমেরিকা তার জন্য আরেকটি সুযোগ, কিন্তু মনে হচ্ছে তিনি এবার দেশের ঘরোয়া ফুটবলে ফিরতে চান।

কেন ঘরে ফেরা দরকার?

নেইমারের ক্যারিয়ার এখন এক সন্ধিক্ষণে। বয়স ৩২ ছুঁইছুঁই, চোটের কারণে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। ইউরোপীয় ফুটবলে তার দিন হয়তো শেষের দিকে, এবং ব্রাজিলিয়ান লিগ কিংবা মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) ফিরে যাওয়া হতে পারে তার জন্য ভালো সিদ্ধান্ত।

১. শারীরিক ও মানসিক পুনরুদ্ধার ইউরোপীয় ফুটবলের চাপ ও প্রতিযোগিতা নেইমারের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে। ব্রাজিলিয়ান লিগে ফিরে গেলে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে স্বস্তি পেতে পারেন। চোট থেকে সেরে ওঠার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

২. ঘরোয়া লিগের উন্নয়নে অবদান নেইমার যদি ব্রাজিলিয়ান লিগে ফিরে আসেন, তাহলে এটি দেশীয় ফুটবলের জন্য বিশাল প্রেরণা হবে। তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য তিনি অনুপ্রেরণা হতে পারেন এবং স্থানীয় ফুটবলের মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

৩. পরিবারের কাছাকাছি থাকা নেইমার সবসময় তার পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ইউরোপ থেকে ব্রাজিলে ফিরলে তিনি তার পরিবারের কাছে থাকতে পারবেন, যা তার মানসিক সুস্থতার জন্য ভালো হতে পারে।

৪. ক্যারিয়ারের সুন্দর সমাপ্তি ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি খেলোয়াড়রা তাদের ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে দেশে ফিরে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—যেমন রোনালদিনহো, কাকা, রোমারিও। নেইমারের ক্ষেত্রেও এটি হতে পারে ক্যারিয়ারের একটি সম্মানজনক উপসংহার।

কোথায় যেতে পারেন?

নেইমার যদি ব্রাজিলে ফেরেন, তাহলে পুরনো ক্লাব সান্তোস তার জন্য আদর্শ গন্তব্য হতে পারে। তবে ফ্লামেঙ্গো বা পালমেইরাসের মতো বড় ক্লাবও তাকে নিতে আগ্রহী হতে পারে। এছাড়া, এমএলএস-এ যোগ দেওয়ার গুঞ্জনও রয়েছে, যেখানে তিনি মেসির সঙ্গে পুনরায় একত্রিত হতে পারেন।

উপসংহার

নেইমার একজন অবিশ্বাস্য প্রতিভাধর খেলোয়াড়, যার ক্যারিয়ার অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্তে ভরা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন আসবেই। হয়তো ইউরোপীয় ফুটবল তাকে আর সেই উজ্জ্বলতা দিতে পারছে না, যা একসময় ছিল। তাই তার জন্য এখন হয়তো ঘরে ফেরার সেরা সময়। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলকে আরও উজ্জ্বল করতে এবং নিজের ক্যারিয়ারের সুন্দর সমাপ্তি টানতে, নেইমারের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত হতে পারে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

Post a Comment

Previous Post Next Post